ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার সাথে প্রেম করার ইচ্ছে বিজ্ঞান শিক্ষক ইমাদুলের। ইমাদুলের বয়স প্রায় পঁয়ত্রিশ। মেয়েটার নাম টুম্পা। তার বয়স তেইশ। ইমাদুলের সাহস হয়না যে মেয়েটার হাত ধরে বা তার সাথে একান্তে কিছু কথা বলে।কিন্তু তার খুব ইচ্ছে হয় টুম্পার কাছে তার মনের আবেগের কথা খুলে বলে, তার হাত ধরে, বা ক্লাস শেষে যখন টুম্পা বেরিয়ে যায় তখন সেও বেরিয়ে গিয়ে তার সাথে রিক্সায় ওঠে। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় আর তার এই সংকোচ এর সুজোগে ক্লাসের স্মার্ট ছেলেরা তার পিছু নেয়।এদের মধ্যে একটা ছেলে হলো টনি। দেখতে এতো বাজে যে ইমাদুলের মনে হয় যদি রাতের চেহারা কালো হয় তবে টনির চেহারা হলো কমোডের নিচের অংশের মতো।আর সবার শরীর থেকে যখন সেন্টের সুগন্ধ ভেসে আসে তখন টনির শরীর থেকে ভেসে আসে রান্নাঘরের বাসি পচা খাবারের দুর্গন্ধ। আর মুখ থেকে আসে সিগারেটের নোংরা গন্ধ। এই প্রোফাইল নিয়ে সে টুম্পার পেছনে ঘোরে।আর টুম্পাই যেন কেমন, সে টনির দিকে তাকিয়ে হাসে।সহ্য হয়না ইমাদুলের।সে চিন্তা করে কিছু টেকনিক বের করে ফেলে। একদিন ফিজিক্স ক্লাসে সে ঘর্ষ বিদ্যুত সম্পর্কে লেকচার দেবার সময় বললো,‘তোমরা কি জানো যে হাতে হাতে ঘষলে ঘর্ষ বিদ্যুত উৎপন্ন হয়?’
সবাই মাথা নাড়লো। ইমাদুল সকলের উদ্দেশ্যে বললো,‘এই গবেষনাটা আমি ছোটবেলায় করতাম, এখন তোমাদের দেখাবো যে একজনের হাতের তালুতে আরেকজন তার হাতের তালু দিয়ে ঘষা দিলে বিদ্যুত উৎপন্ন হয়। টুম্পা এদিকে এসো আমি দেখাচ্ছি।’
টনি তাড়াতাড়ি বললো,‘টুম্পা এদিকে আসো, স্যারের কষ্ট করার দরকার নেই। আমিই দেখিয়ে দিচ্ছি।’
ইমাদুল চুন মুখে বললো,‘পরীক্ষাটা অন্যদিন করবো, আজ থাক।’
আরেকদিন ক্লাসে আই বল রোটেশন বোঝাচ্ছে ইমাদুল।এক ছেলে প্রশ্ন করলো ‘স্যার ট্যারা হলে দুই চোখের তারা নাকের দিকে চলে আসে কিন্তু স্যার এই তারাদুটোকে চোখের দুই দিকে নেবার উপায় কি?’
ইমাদুলের মাথায় চকিতে ঘর্ষ বিদ্যুত উৎপন্ন হয়ে গেল। টুম্পার সান্নিধ্যে যাবার আরেকটা রাস্তার সবুজ বাতি জ্বলে গেছে।সে তাড়াতাড়ি বললো,‘হ্যাঁ, উপায় আছে। যদি কেউ কারো খুব কাছে গিয়ে নাকের সাথে নাক লাগিয়ে তার চোখের দিকে তাকায় তবে অন্যজনের মনে হবে যে তার আই বল দুটো দু’দিকে বেঁকে গেছে। আমি এই পরীক্ষাটা হাতে কলমে দেখিয়ে দিচ্ছি।টুম্পা...।’
টনি তাড়াতাড়ি হাত তুলে বললো,‘স্যার আমি আসি? আপনার নাকে নাক ঠেকিয়ে আপনার চোখে চোখ...।’
ইমাদুলের লাইফ হেল হয়ে গেছে। যে ছেলেটাকে দেখলে তার গা গুলিয়ে বমি আসে সে নাকি তার নাকে নাক ঠেকিয়ে চোখে চোখ রাখবে।রাগে ঘুম আসেনা তার। যে করে হোক জব্দ করতে হবে হারামজাদাকে।
কয়েকদিন পর ক্লাসে হাজির হয় ইমাদুল। সেদিনও ক্লাস পরিপূর্ন।যথারীতি তার মানসী টুম্পা ও ভিলেন টনি উপস্তিত সামনের কাতারে।ক্লাসে ঢুকেই ঘোষনা দেয় ইমাদুল,‘আজ আরেকটা এক্সপেরিমেন্ট করবো। টুম্পা রেডি?’
পেছন থেকে টনি বললো,‘আমি রেডি স্যার।’
ইমাদুল বললো,‘এখানে টুম্পাকেও লাগবে।’
টনি বললো,‘আমিও ওর সাথে থাকতে চাই স্যার।’
‘এক্সপেরিমেন্টটা কি তুমি নিতে চাইছো?’
‘জ্বি স্যার।’
‘ঠিক আছে।টুম্পা আর টনি দু’জনেই এসো।’
টুম্পা আর টনি দু’জনেই এগিয়ে এলো। ইমাদুল সকলের উদ্দেশ্যে বললো,‘আমরা সকলেই ঘাস গজানো দেখেছি কিন্তু পুষ্টি ছাড়া যে চুল গজাতে পারেনা এটা আমরা আজ পরীক্ষা করবো। টুম্পা তুমি এই বিশেষ টুপিটা ওর মাথায় পরিয়ে দাও তারপর সুইচ টিপে দাও।’
টুম্পা তাই করলো। সাথে সাথে টনির মাথার সব চুল গায়েব। হতভম্ব টনি দেখলো তার মাথায় চকচক করছে একটা টাক। তবে টাকের চারপাশে স্টেডিয়ামের দর্শকের মতো কালো চুলও আছে।’
‘এবার এই ডিমটা ভেঙ্গে ওর মাথায় লেপে দাও টুম্পা।আমরা দেখতে চাই এতে ওর মাথায় কতোটুকু পুষ্টি গুন যোগ হয়।’
‘স্যার!’ লজ্জায় চিৎকার করে উঠলো টনি।
‘কোন সমস্যা নেই টনি।’ ইমাদুল বললো,‘এটা জাস্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট, কোন সমস্যা নেই। টুম্পা ডিমটা ভালো করে ওর মাথায় মাখিয়ে দিয়ে এবার সেখানে কিছুটা পটাশ পারমাঙ্গানেট ছড়িয়ে দাও।’
টুম্পা তাই করলো। সাথে সাথে পুরো ক্লাসরুমে টাটকা মনুষ্য টয়লেটের গন্ধে ভরপুর হয়ে উঠলো। ডিমের সাথে পটাশ পারমাঙ্গানেটের মিশ্রনের ফল।সবাই নাকে রুমাল চেপে টনির কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।বোকার মতো চোখ বড়ো বড়ো করে বসে আছে টনি।ইমাদুল হাসছে বিজয়ের হাসি। চেহারায় এমন ভাব যে মনে হচ্ছে টনিকে একটা সমুচিত শাস্তি দিতে পেরেছে।সত্যিই শাস্তি পেয়েছে টনি। ওর চোখে কান্না। চেহারাটা তার বিটকেল তার ওপর মাথার টাক আর গুয়ের গন্ধ ওকে ভয়ানক এক প্রানীতে পরিনত করেছে।সেই ভয়ানক জন্তুটা যদি চোখে কান্না নিয়ে তাকিয়ে থাকে তবে তাকে কেমন লাগতে পারে তা যে দেখেনি সে বলতেও পারবেনা।
ক্লাসের সকলে সরে গেছে টনির কাছ থেকে। কেবল টুম্পা দাঁড়িয়ে আছে চোখে অবিশ্বাস নিয়ে।হঠাৎ সে তার ব্যাগ থেকে একটা টাওয়েল বের করে ছুটে গেল টনির দিকে তারপর পানির বোতল থেকে ধুয়ে দিতে শুরু করলো তার মাথা। আর টনির চোখে পানি দেখে সে নিজেও কেঁদে কেঁদে বলতে শুরু করলো,‘আমি দায়ি তোমার এই অবস্থার জন্য। সবাই তোমার কাছ থেকে সরে গেলেও আমি সরে যাবোনা টনি। আমি সারাজীবন তোমার সাথেই থাকতে চাই।’
তারপর ইমাদুলের বিশ্মিত আর ব্যথিত চোখের সামনে দিয়ে টনিকে ধরে ধরে করিডোর দিয়ে হেঁটে চলে গেল টুম্পা।
0 comments:
Post a Comment