Sunday, July 17, 2016

তানিয়া.................................................তুহিন রহমান


আমাদের কাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার নাম ছিলো তানিয়া। অবশ্য বয়স এতো কম ছিলো যে সুন্দরের তাৎপর্য বোঝা আর আকর্ষনের মাত্রা পরিমাপ করা আমার জন্য অসম্ভব ছিলো। কিন্তু একটু বয়স যখন হলো তখন আমি তো দুরের কথা কাসের সবচেয়ে ভালো ছেলেটাও ওর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলো। ফলে আমার মতো হাবাগোবা ছেলেটার পে তানিয়ার কাছে যাওয়া বেশ দুস্কর ছিলো।
কিন্তু মনেপ্রানে আমি তানিয়ার কাছে যাবার চেষ্টা করে যেতাম। যখন কাস ফাইভে উঠলাম তানিয়ার সেই সময়ের চেহারার কথা বেশ মনে আছে কারন সে তখন তার সৌন্দর্যের শিখরে অবস্থান নিয়েছে। আমার মনে হয় তখনই সে সবচেয়ে সুন্দরী হয়ে উঠেছিলো। হে মানবী আমি তো কেবল তোমার কাছে যাবার প্রার্থনা করি কায়মনোবাক্যে। তুমি কি আমার কথা শুনতে পাও?
যখন কাস সিঙ্ েউঠলাম, তখনও ছেলেমেয়ে ভেদাভেদ ছিলোনা। আমরা কাসে ঢুকে ছেলেমেয়ে একসাথে বসতাম। তখনও কে আগে তানিয়ার পাশে বসবে এই নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। এমনকি তানিয়ার পাশে বসার জন্য কেউ কেউ স্কুলের গেট খোলার আগেই এসে বসে থাকতো স্কুলের সামনে।
আহ্‌ সেইদিনগুলো কি সুন্দরই না ছিলো! আমিও মনে মনে তানিয়াকে আমার পাশে কল্পনা করতাম। আমি জানিনা ও কিভাবে যেন বুঝে ফেলতো সব। মেয়েমানুষের মন বলে কথা। বোধহয় আমার চোখের ভাষা বুঝে ফেলতো সে। আমার না বলা কথাগুলো যেন চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইতো তানিয়াকে দেখলে। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হাসতো যে আমার বুকের ভেতরটা হিম হয়ে যেত।
যদি ওকে এভাবে সারাজীবন আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখতাম! সবাই ঝটপট ওর দুইপাশ জোড়া করে বসে পড়তো। আমার আর স্থান হতোনা ওর পাশে। আমি ঠিক ওর পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। ওর চুল থেকে যে গন্ধ ভেসে আসতো তাতে আমি অবশ হয়ে বসে থাকতাম। সমস্ত কাস আমার কাছে শুন্য বলে মনে হতো। ওর চুলের গন্ধ খুঁজে বেড়াতাম আমি সব জায়গায়। কোথায় সেই সৌরভ? তানিয়ার চুলের স্বর্গীয় সুগন্ধ কোথায়?
তানিয়া কিভাবে যেন বুঝে ফেললো আমার ব্যপারটা। একদিন বাথরুমে যাবার পথে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো ও,'শিশির, আমি জানি তুমি আমাকে কি বলতে চাও।'
আমার বুকের ভেতর দমাদম বাড়ি মারতে লাগলো হৃৎপৃন্ড। আমি কিছু বলতে পারছিনা। ও আমার যাবার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। 'আমি তো-তোমাকে ক্কি-কি বলতে চাই?' কোনমতে বললাম।
তানিয়া হাসলো আমার দিকে তাকিয়ে। 'তুমি জানো কি বলতে চাও আমি কিভাবে বলবো? তবে আমি একটা কথা তোমাকে বলতে চাই শিশির।'
আমি ঢোক গিললাম।
'তুমি ভুল করছো শিশির।' তানিয়া বললো। 'আমি তোমাকে কখনও এঙ্পেক্ট করিনি বুঝেছো? আর আমি তোমাকে চিনি। তোমার মতো কাউকে নিয়ে আমি কখনও স্বপ্ন দেখিনি। আমি সবসময় স্বপ্ন দেখেছি তোমার চেয়েও বড়ো কাউকে নিয়ে যে অনেক হ্যান্ডসাম, অনেক টাকাপয়সাআলা....।'
সেদিন আমার পৃথিবীটা ভেঙ্গে খানখান হয়ে গিয়েছিলো। আমি আর তানিয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারিনি। এরপর থেকে কাসে গেলে ওর কাছ থেকে অনেক দুরে বসতাম।
এভাবে একদিন ভুলেই গেলাম ওর কথা। আমি কাস এইটে ওঠার আগে ওই স্কুল ছেড়ে চলে এলাম আরেক স্কুলে। সেই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করলাম ভালো রেজাল্ট নিয়ে। ভর্তি হলাম নটরডেম কলেজে। এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। অনার্স করলাম বিজনেস এ্যান্ড ফাইনান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে। ব্যবসার প্রতি সবসময় প্রবল ঝোঁক আমার। বিশেষ করে এঙ্পোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার প্রতি আমার অন্যরকম এক আকর্ষন ছিলো ছোটবেলা থেকে। মাস্টার্স করলাম ওই একই সাবজেক্টে। মাস্টার্স শেষ করার আগেই অবশ্য আমি দাঁড়িয়ে গেলাম একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে। মাস্টার্স পরীার পর আরো ভালোভাবে লেগে গেলাম ব্যবসাটা নিয়ে।
দুইহাজার পাঁচ সালের পর আমি একজন সফল ব্যবসায়ী। দুই হাজার ছয় সালে বিয়ে করলাম। আমার একটা কন্যা সন্তান জন্ম নিলো। মেয়েটা হবার পরপর আমার ভাগ্য আরো ভালো হয়ে গেল বলা যায়। ঢাকায় কয়েকটা ফাট আর জমি কিনে ফেললাম। দুটো গাড়ি আমাদের। অফিসের জন্য আরও দুটো গাড়ি।
নিয়মিত আমি অফিসে বসি। বেশ কিছু কর্মচারী আছে যাদের নিয়মিত মোটা বেতন দিয়ে রাখতে হয়। যে ম্যানেজারটা আছে সে বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে দেশে এসেছে বলে আমাকে আরও বেশী টাকা দিতে হয় তাকে। এই টাকা দিয়ে আমি আরো দুজন ম্যানেজার রাখতে পারতাম আমি। একদিন বসে আছি হঠাৎ এক লোক এলো আমার সাথে দেখা করতে। তিনি নাকি আমার বেশ পরিচিত।
জিজ্ঞেস করলাম,'আপনাকে কি আমি চিনি?'
'আমাকে আপনি ঠিক চিনবেননা স্যার। তবে আমি আপনাকে চিনি।' সে বললো।
'কিভাবে চেনেন বলুনতো?'
লোকটা আমার দিকে একটা কার্ড বাড়িয়ে দিলো,'আমি হারুন আফসারী। তানিয়ার হাজবেন্ড।'
'তানিয়া? কোন তানিয়া?'
'আপনার কাসমেট তানিয়া। স্মরন করতে পারছেননা?'
এক নিমিষে সব মনে পড়ে গেল। আজব মানুষের মন। কিভাবে যেন সব ধামাচাপা দিয়ে ফেলে একনিমেষে! আবার সময় এলে উগরে দেয় একেবারে দাঁড়ি কমা পর্যন্ত! বুকের ভেতরটা কে যেন খামচে ধরলো আমার। আমি কিছু বলতে পারলামনা।
'আমি জানি স্যার আপনি আমার স্ত্রীকে চিনতে পেরেছেন।' দাঁত বের করে হাসলো হারুন।
'জ্বি, আমি চিনতে পেরেছি।' আমি বললাম। 'আমার সাথে কাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছিলো।'
'পড়েছিলো কি বলছেন স্যার, এখনও পড়ে!'
'এখনও পড়ে মানে?'
হারুন হেসেই অস্থির। 'সে তো প্রতিদিন আপনার কথা বলতে বলতে আমার কানই পচিয়ে ফেলেছে স্যার।'
'আচ্ছা, আপনি আমাকে স্যার স্যার করছেন কেন বলুনতো?'
'আমি একটা আর্জি নিয়ে এসেছি আপনার কাছে, স্যার। তানিয়াই বললো আমি যেন আপনার কাছে যাই। আপনি ওর সবচেয়ে কোজ ফ্রেন্ড ছিলেন একসময়। আজ যদি আপনি আমাদের বিপদে আমাদের পাশে না দাঁড়ান তবে আপনারই খারাপ লাগবে স্যার।'
আমি বুঝতে পারছি লোকটা কি জন্যে এসেছে তারপরও বললাম,'বলুন আমি কি করতে পারি আপনার জন্য?'
'আমার কিছু টাকা লাগবে স্যার। ব্যবসা করতে গিয়ে বিরাট লস হয়েছে। তারপর থেকে খুব খারাপ কন্ডিশন আমাদের। বলতে গেলে না খাওয়া অবস্থা। আপনি যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে তানিয়াকে পাঠাই স্যার আপনার কাছে?'
'কেন? আমার কাছে এসে কি করবে ও?'
'না স্যার কিছুনা। মানে লাঞ্চ আওয়ারে তো আপনি একা থাকেন। আপনি যদি বলেন তো ওকে কাল লাঞ্চ আওয়ারে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেই?'
মনে মনে হোঁচট খেলাম একটা। আমি জানি হারুন কি মিন করছে। শেষ পর্যন্ত তানিয়া....। ছোটবেলার সেই তানিয়ার কথা মনে পড়ে গেল আমার। ওর চুলের ঘ্রানে আমার পৃথিবী বদলে যেত, আর আজ আমি কি শুনছি?
'বলুন স্যার। আমি কাল দুপুরে আপনার রুমে তানিয়াকে পাঠিয়ে দেই?'
বুঝতে পারছিনা কি বলবো। হ্যাঁ বা না একটা কিছু তো বলতে হবে। একদিকে আমার পৌরুষদিপ্ত আলোকোজ্জ্বল হৃদয় আর অন্যদিকে অন্ধকার গলির পঙ্কিলতা। তানিয়ার সেই ফিগার, তার চোখ, খাড়া নাক, গ্রীবা, চুলের ঘ্রান হাতের আঙুল, সব কি আগের মতো আছে? বুঝতে পারছিনা এখনও।
হারুনের দিকে তাকালাম। সে অধীর আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 'ঠিকআছে, তানিয়াকে কাল দুপুরে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন।'
লোকটা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
পরদিন দুপুর ঠিক দুটোয় আমার অফিসের দরজায় নক হলো। আমি জানতাম ও আসবে তাই দুপুর বারোটায় সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। আমি এখন কি করবো? এ এক কঠিন পরীা আমার সামনে। ছোটবেলার সেই কাস ফ্রেন্ড তানিয়া আমার সামনে আসবে একজন বেশ্যার প্রতিকৃতি নিয়ে। আমি কিভাবে তাকে ভোগ করবো? নাকি তাকে জাস্ট টাকা দিয়ে মুক্তি পাবো এই বিরাট সমস্যা থেকে? কিন্তু কেন তাকে টাকা দেবো? সেতো সেই সময় আমার দিকে তাকায়নি।  দেখি ভাগ্য কোন দিকে নিয়ে যায় আমাকে। দরজাটা খুলে দিলাম আমি।
(চলবে....)

0 comments:

Post a Comment

এই পেজটি দেখা হয়েছে সর্বমোট

Popular Posts

Recent Posts

Powered by Blogger.

Followers

Sample Text

Recent Posts

300x250 AD TOP

Find us on Google Plus

Recent in Sports

Home Ads

Travel

Instagram posts

Kategori

Kategori

Recent Comments

Text Widget

Text Widget

Contact With Us

Name

Email *

Message *

Facebook

Comments

Definition List

Download

Random Posts

Recent

Popular

Popular Posts